Header Ads Widget

Responsive Advertisement

তৃতীয় পর্ব #তিন_গোয়েন্দা সিরিজ থেকে #আলাস্কা_অভিযান - রাকিব হাসান


তৃতীয় পর্ব 


#তিন_গোয়েন্দা সিরিজ থেকে

#আলাস্কা_অভিযান - রাকিব হাসান


স্তব্ধ হয়ে ছুরিটার দিকে তাকিয়ে আছে দুজনে। দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কেটে গেল। অবশেষে মুখ খুলল মুসা, মাংসের টুকরোটা হুক থেকে খুলে নিয়ে গেছে কেউ।

গম্ভীর হয়ে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। মনে হয়।

কোন বুনো জানোয়ার অত ওপরে নাগাল পাবে না। নেকড়ে ততা পাবেই না, ভালুকেও পাবে না। তাহলে মানুষের খাবার চুরি করতে এল এ কোন জানোয়ার?

মানুষ-জানোয়ার, জবাব দিল কিশোর। খাওয়ার জন্য চুরি করলে মাপ করে দেয়া যেত। কিন্তু আমি শিওর, টিনুকদের ভয় দেখানোর জন্য করেছে। বোঝাতে চেয়েছে, দেখো, কত সহজেই আমি কত বড় ক্ষতি করে দিতে পারি। বসন্তকাল না আসা পর্যন্ত এখন না খেয়ে থাকো।

দেয়ালের কাছে গিয়ে ছবিটা শুকে দেখল কিশোর। তাজা রঙ। ঘণ্টা দুয়েক আগে এঁকেছে।

এক মুহূর্ত ভাবল মুসা। বলল, দুই ঘণ্টা আগে ফল নিয়ে এসেছিল টেড। ফলের ঝুড়ি রেখে ফিরে যাওয়ার সময় মাংসের টুকরোটা বের করে নিয়ে যাওয়া ওর জন্য সহজ।

যে কারও জন্যই সহজ। মাত্র কয়েক পা দূরে বন। ভিতর দিয়ে এলে কারও চোখে পড়বে না।

কিন্তু নিল কীভাবে? মুসার প্রশ্ন। মুজের একটা আস্ত রান কাঁধে করে বয়ে নিতে পারবে না। অনেক ওজন।

কম করে হলেও পঞ্চাশ কেজি। কিন্তু আমি ভাবছি টিনুকরা এখন খাবে কী? শিকারের মৌসুমের তো এখনও অনেক দেরি। কী যেন ভাবল কিশোর। চলল তো, বাইরে গিয়ে দেখি। কোন সূত্র পাই কি না।

কেরোসিন-লণ্ঠনের কাঁপা কাঁপা অতি সামান্য আলো। তবে চিহ্নটা খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হলো না ওদের। এক ইঞ্চি চওড়া দুটো গভীর রেখা চলে গেছে বরফের ওপর দিয়ে। রেখা দুটোর মাঝখানের দূরত্ব দেড় ফুট।

ডগশ্রেজের দাগ না, মুসা বলল। তাহলে দাগের মাঝখানের দূরত্ব আরও বেশি হতো।

ঝর্না থেকে পানি আনতে গিয়েছিল মুন, মনে আছে? হাতে টানা একটা স্লেজ নিয়ে গিয়েছিল সে…

নীচের চোয়াল স্কুলে পড়ার অবস্থা হলো মুসার। কিশোর, তুমি মুনকে সন্দেহ করছ?

না না, তা করছি না, কিশোর বলল। তবে পানি আনার পর ছাউনির বাইরে রেখেছিল হয়তো স্লেজটা। আর তাতে করে মাংস বয়ে নিতে পারে চোর।

মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে ভালমত দাগগুলো দেখল মুসা। হ্যাঁ, স্টেজে করেই নিয়েছে। দেখো, ডানের রেখাটার চেয়ে বায়ের রেখাটা বেশি গভীর। বোঝার ভারে হয়েছে। আর বোঝা মানে মাংস। ভারী দিকটা রাখা ছিল গাড়ির বাঁ পাশে।

অন্ধকারে জোসির ডাক শোনা গেল, কিশোর? মুসা?

জোসি, আমরা এখানে, জবাব দিল মুসা।

জোসি এলে ওকে সব জানাল ওরা। অ্যাথাবাস্কান ভাষার তুবড়ি ছোটাল জোসি। একটা বর্ণও বুঝল না দুজনে।

এই দেখো, স্লেজের দাগ, লণ্ঠনটা উঁচু করে ধরল কিশোর।

ওকে অবাক করে দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল জোসি। একটা রেখার ওপর গাল চেপে ধরল। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চাচার স্লেজ। চুরিটা করেছে সূর্য ডোবার ঠিক পর পর।

কী করে বুঝলে? কিশোরের প্রশ্ন।

রেখা ছুঁয়ে, জোসি বলল। চলো, দেখি চোরটা কোনদিকে গেছে।

বনের ভিতর দিয়ে পঞ্চাশ গজ মত এগিয়ে হাত তুলল জোসি। দাঁড়াও। ঝোপের মধ্যে কী যেন পড়ে আছে। কিশোর, লণ্ঠনটা বা দিকে উঁচু করো তো।

উঁচু করে ধরল কিশোর। চোখের পাতা সরু করে তাকাল মুসা। অন্ধকারে একটা কালো কী যেন পড়ে থাকতে দেখল।

হাসল জোসি। ওটাই আমাদের মুজের মাংস। যাক, রাতে আর খেয়ে থাকতে হবে না।

আস্ত একটা রান সহ এক পাশের অনেকখানি মাংস। টুকরোটা ছাউনিতে বয়ে নিল এল ওরা।

তোমরা কাটতে থাকো, আমি আসছি, ছাউনি থেকে বেরিয়ে গেল জোসি। দাগ ধরে ধরে চোরের সন্ধানে এগোল। কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে জানাল, ওর কাছে যেতে পারলাম না। ভীষণ চালাক। স্লেজটা নেয়নি। ঝোপের মধ্যে মাংস ফেলে দিয়ে জেটা এনে রেখে গেছে আবার ছাউনির কাছে।

কিশোর বলল, আমি জানতাম, চুরির উদ্দেশ্যে চুরি করেনি চোর। ভয় দেখাতে চেয়েছে।

হ্যাঁ, জোসিও কিশোরের সঙ্গে একমত। চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, প্রথমে আমাদের কেবিনে আগুন, তারপর জানালা দিয়ে লাকড়ি ছুঁড়ে মারা, তারপর আপেলে বিষ দেয়া, আর সবশেষে এই মাংস চুরি। কেউ একজন আমাদেরকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে।

পরদিন সকালে জোসি ওর কুকুরগুলোকে দেখতে গেল, কিশোর ও মুসা চলল শহরে, রহস্যের তদন্ত করতে। প্রথমেই যার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, সে ইলকিস বিগ্স্।

হাই, বয়েজ, দেখেই হাসিমুখে চেঁচিয়ে উঠল বিগ। তারপর? গ্লিটারে কেমন কাটছে সময়?

ভাল, জবাব দিল কিশোর। এই ফলের ঝুড়ির ব্যাপারে কিছু কথা ছিল।

বলে ফেলল। কীসের ফল?

ওই যে গতকাল আপনি যেটা পাঠিয়েছিলেন টিনুকদেরকে, মুসা বলল।

আমি ফল পাঠাইনি। তবে মনে করিয়ে দিয়ে ভালই করলে। ওদের তো সবই পুড়ে গেছে। কিছু খাবারটাবার পাঠানো উচিত। শুনলাম, কাল রাতে নাকি ওদের খাবারও চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময়ে কারও মাংস চুরি যাওয়ার মানে ভয়ানক বিপদ। স্রেফ না খেয়ে মরতে হবে।

কিন্তু আপনি জানলেন কীভাবে? কিশোরের প্রশ্ন।

তোমাদেরকে তো আগেই বলেছি, এখানে খবর খুব দ্রুত ছড়ায়। ফলের ঝুড়ির কথা কী যেন বলছিলে?

এক ঝুড়ি তাজা ফল দিয়ে আসা হয়েছিল টিনুকদের বাড়িতে, তাতে আপনার কার্ড ছিল, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বিগসের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। চেহারার কোন পরিবর্তন দেখল না। ওই ঝুড়ির আপেল খেয়ে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন জেফরি আঙ্কেল। প্রায় মরার দশা।

কঠিন হয়ে গেল বিগসের দৃষ্টি। তোমরা কী বলতে চাও, বুঝতে পারছি। কিন্তু কাল কাউকে ফল পাঠাইনি আমি,

তাহলে ঝুড়িতে দেয়া কার্ডটা? মুসার প্রশ্ন।

গ্লিটারের অর্ধেক লোকের কাছেই আমার কার্ড আছে, বিগ বলল। যে কেউ আমার কার্ড ঝুড়িতে রেখে দিতে পারে। যা-ই হোক, আমাকে এখন যেতে হবে। জরুরি কাজ আছে।

তাড়াহুড়া করে চলে গেল বিগস্।

কিশোর বলল, অন্য কেউ পাঠিয়েছিল আপেলের ঝুড়িটা।

কে পাঠিয়েছিল জানি আমরা, মুসা বলল। জোসির বিরুদ্ধে যার প্রচণ্ড আক্রোশ। জোসির রেস জেতা যে বন্ধ করতে চায়। প্রয়োজনে তার আত্মীয়-স্বজনের ক্ষতি করে হলেও।

চলো, লুককে জিজ্ঞেস করে দেখি তিনি কী বলেন। তাঁর টুওয়ে রেডিওটাও লাগবে। থিম পার্কের ব্যাপারে মিস্টার সাইমনকে একটু খোঁজ-খবর করতে বলব।

বিখ্যাত গোয়েন্দা মিস্টার ভিকটর সাইমন, খোড়া গোয়েন্দা বইতে তিন গোয়েন্দার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এরপর থেকে তার সঙ্গে বহু কেসে কাজ করেছে তিন গোয়েন্দা। কখনও তিনি ওদের সহায়তা চেয়েছেন, কখনও তিন গোয়েন্দা ওঁর সাহায্য নিয়েছে।

ভালই হয়, কিশোরের কথায় মুসাও একমত। চলো।

দোকানেই পাওয়া গেল লুককে। রেডিও ব্যবহার করতে চাইল কিশোর। ওদেরকে দোকানের পিছনের ঘরে নিয়ে গেলেন লুক। ফেয়ারব্যাংকসে যোগাযোগ করা হলো প্রথমে। সেখান থেকে লাইন দেয়া হলো রকি বিচে। একটা টেলিফোন রিসিভার কিশোরের হাতে ধরিয়ে দিলেন লুক।

মাইক্রোফোনে হাত চাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিশোর। লুকের দিকে তাকাল।

বুঝতে পারলেন তিনি। অ, একা কথা বলতে চাও। তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

গ্লিটারে কী ঘটছে, সংক্ষেপে মিস্টার সাইমনকে জানাল কিশোর। তবে ওর সন্দেহের কথা চেপে গেল। কারণ একটা ছোট শর্ট ওয়েভ রেডিও সেট-এর সাহায্যে যে কেউ ওদের গোপন কথা শুনে নিতে পারবে।

সবশেষে বলল, সার, একটা কোম্পানি এখানে থিম পার্ক বানাতে চায়। কোম্পানিটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে আমার কাছে। এ ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন নাকি?

আলাস্কার গ্লিটারে থিম পার্ক? না, জানি না তো, মিস্টার সাইমন বললেন। তবে ইন্টারেস্টিং বলছ যেহেতু, খোঁজ নেয়া যেতে পারে। ঘণ্টাখানেক পরে আবার যোগাযোগ কোরো এই নম্বরে।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর। মিস্টার সাইমন ওর ইঙ্গিত বুঝতে পেরেছেন। মুসাকে বলল, ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই জানাবেন। ফলের ঝুড়িটার কথা আর আপাতত জিজ্ঞেস করব না লুককে। মিস্টার সাইমন কী বলেন আগে শুনি। তারপর।

দোকান থেকে বেরিয়ে এল দুজনে। পরের পঁয়তাল্লিশ মিনিট টেডকে খুঁজে বেড়াল ওরা। রাস্তায় কয়েকজন জানাল, সকালে টেডকে দেখেছে। কিন্তু কিশোর-মুসা ওর দেখা পেল না।

দোকানে ফিরে এল ওরা। আবার মিস্টার সাইমনের সঙ্গে যোগাযোগ করল কিশোর। কথা শেষ করতে মিনিটখানেকের বেশি লাগল না এবার। লাইন কেটে দিয়ে মুসাকে জানাল, কোম্পানিটার কোন বদনাম নেই, তবে টাকার টানাটানিতে পড়েছে। থিম পার্কের প্ল্যান কার্যকর করতে না পারলে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে ওদের পক্ষে।

মাথা দোলাল মুসা। হু। তারমানে ভোটে জিততেই হবে ওদের, যেভাবেই হোক। আর জেতার জন্য হয়তো বিষ খাইয়ে মানুষ মারতেও পিছ-পা হবে না। খুবই জোরাল মোটিভ।

খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে নিল কিশোর, কাছাকাছি। লুক আছে কি না। কণ্ঠস্বর নামিয়ে বলল, কিন্তু বিগ তো ফলের ঝুড়ি পাঠানোর কথা স্বীকার করল না।

অপরাধী কি আর সহজে কিছু স্বীকার করে? মুসা বলল, চলো, লুকের সঙ্গে কথা বলি।

দোকানের মূল ঘরে ফিরে এল ওরা। চকচকে পালিশ করা কাউন্টারের ওপাশে তাকের ওপর কনডেন্সড মিল্কের টিন সাজাচ্ছেন লুক। ফিরে তাকিয়ে হাসলেন। কি, কথা হলো?

হ্যাঁ। থ্যাংক ইউ, জবাব দিল কিশোর। আচ্ছা, লুক, কাল আপনি টিনুকদের বাড়িতে ফলের ঝুড়ি পাঠিয়েছিলেন?

মাথা নাড়লেন লুক। আমি না, বিগ দিয়েছিল। আমি টেডকে দিয়ে জেফরির বাড়িতে পাঠিয়েছি। কেন?

আশ্চর্য! মুসা বলল। আপনার দোকানে আসার আগে বিগসের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাদের। স্বীকারই করল না।

তাই নাকি? আমার এই কাউন্টারের ওপর পেয়েছি ঝুড়িটা। তাতে বিগৃসের একটা কার্ড আর একটা নোট ছিল। নোটে অনুরোধ করে লেখা ছিল, ঝুড়িটা যাতে টিকদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। আমি ভাবলাম বিগসই রেখে গেছে।

কিশোর জিজ্ঞেস করল, নোটটা আছে?

না। ফেলে দিয়েছি। কী যেন মনে পড়তে মাথা দোলালেন। মনে হচ্ছে, শুধু বিস্ না, গোল্ডও এতে জড়িত। ওকে দিয়েই করিয়েছে।

বুড়ো প্রসপেক্টর?

মাথা ঝাঁকালেন লুক। কাউন্টারের দিকে চোখ নামালেন। মানুষের গোপন কথা অন্য কাউকে জানাতে ভাল লাগে না আমার। চোখ তুলে বিব্রত হাসি হাসলেন। কিন্তু মনে হচ্ছে তোমাদের বলা উচিত। কাল রাতে বিগসকে গোল্ডের হাতে টাকার তোড়া দিতে দেখেছি। চুপি চুপি দিচ্ছিল। এত টাকা কেন দিল গোল্ডকে? শুধু শুধু নিশ্চয় নয়? কিছু করানোর জন্য দিয়েছে।

কীভাবে দেখলেন? জানালা দিয়ে। কি জানি কি মনে হলো, রাতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম, তখন দেখলাম।

লুককে ধন্যবাদ দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এল দুই গোয়েন্দা। রাস্তায় নেমে কিশোর বলল, গোন্ডের সঙ্গে কথা বলা দরকার।

একটা কেবিন দেখে থামল ও। গোল্ডকে কোথায় পাওয়া যাবে জিজ্ঞেস করে জেনে নিল।

পাহাড়ী রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল ওরা। শহরকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলল। পায়ে চলা সরু পথটা পুরানো দিনের গোন্ড রাশ যুগের কথা মনে করিয়ে দেয়।

গোন্ডের সোনার খনিটা শহর থেকে বিশ মিনিটের হাঁটা পথ। বরফ জমে থাকা সরু নালার ওপাশে মলিন একটা কুঁড়ে, প্রথম চোখে পড়ল কিশোরের। মুসাকে দাঁড়াতে বলে এগিয়ে গিয়ে গলা চড়িয়ে ডাকল, হাই, গোন্ড?

জবাব পেল না।

আরেকটু কাছে গিয়ে আবার ডাকল।

মৃদু পদশব্দ শুনে ঘুরে তাকাতে গেল। পারল না। পিছন থেকে ওর গলা পেঁচিয়ে ধরল একটা বাহু। চাপ বাড়াতে বাড়াতে শ্বাসরুদ্ধ করে দিল।


জটিল কিছু যন্ত্রপাতি দেখে কৌতূহল হয়েছিল মুসার, দেখার জন্য আগের জায়গা থেকে সরে চলে এসেছিল, সে-কারণেই কিশোরকে আক্রান্ত হতে দেখেনি। চাপা চিৎকার শুনে ফিরে তাকাল। গোল্ডের সবুজ পার্কা আর লাল ক্যাপ চিনতে পারল। কিশোরের গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে পোন্ড।

বন্ধুকে সাহায্য করতে ছুটল মুসা।

তবে ওর সাহায্যের প্রয়োজন হলো না। গোন্ডের কনুই আর কজি চেপে ধরে হঠাৎ ঝটকা দিয়ে পাশে সরে গেল কিশোর। জুজুৎসুর প্যাচ হ্যামারলক-এ আটকে ফেলল বিস্মিত গোন্ডকে।

ছাড়ো ছাড়ো! ব্যথা দিচ্ছ তো আমাকে! চেঁচিয়ে উঠল গোল্ড। আমি বুড়ো মানুষ!

আমাকে ধরার আগে কথাটা ভাবা উচিত ছিল আপনার। গোল্ডকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত দুই কদম পিছিয়ে গেল কিশোর। গোল্ড যদি আবার কিছু করতে চায়, পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত ও।

ভুরু দুটো কুঁচকে রেখে বাহুর ওপরের অংশ ডলতে লাগল গোল্ড। আমার ওপর নজর রাখছিলে তুমি। এ সব আমার ভাল লাগে না।

নজর রাখতে আসিনি, আপনার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি, জবাবটা দিল মুসা। আপনাকে ঘাবড়ে দিতে চাইনি। বলেই বুঝল ভুল কথা বলে ফেলেছে।

ঘাবড়ে দেবে! চিৎকার করে উঠল গোল্ড, আমাকে? কেউ আমাকে ঘাবড়ে দিতে পারে না!

না না, তাড়াতাড়ি বলল মুসা, আসলে চমকে দিতে চাইনি।

মাটিতে থুতু ফেলল গোল্ড। আমাকে কেউ চমকেও দিতে পারে। পিছন থেকে এসে টেক্স ফেরানিকে অবাক করবে, এত সহজ। আমি তোমাদের আসার শব্দ শুনেছি। তোমাদের গন্ধ পেয়েছি…

ওকে থামিয়ে দেয়ার জন্য কিশোর বলল, আমরা এসেছি আপনার সঙ্গে কথা বলতে।

গোল্ডের ঝোপের মত ভুরুজোড়া কুঁচকে গেল। চোখে সন্দেহ। কী কথা?

থিম পার্ক সম্পর্কে আপনি কী ভাবছেন জানতে এলাম। গ্লিটারবাসীদের কাকে ভোট দেয়া উচিত?

উজ্জ্বল হলো গোল্ডের চেহারা। জরিপ চালাতে এসেছে, আগে বলবে তো। আমার মনে হয় সবারই হ্যাঁ ভোটে ভোট দেয়া উচিত। না দিতে যাবে কেন?

থিম লাইফের আইডিয়াটা তারমানে আপনার পছন্দ হয়েছে?

না হওয়ার কোন কারণ আছে? টাকা আসবে, প্রচুর টাকা! পকেট ভর্তি করে আনবে টুরিস্টরা। আমার খনি দেখতে আসবে। এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হয়ে উঠবে এটা। পুরানো গোল্ড রাশের দিনগুলোর একটা চিত্র পাবে লোকে। বছর দুএকের মধ্যেই

অবসর নেয়ার মত টাকা কামিয়ে ফেলতে পারব আমি। ফ্লোরিডায় চলে যাব।

প্যান্টের পকেটে হাত ঢোকাল গোল্ড। বের করে এনে সামনে বাড়িয়ে দিল। দেখো।

দুর্বল সূর্যালোকে চকচক করে উঠল হাতের তালুতে রাখা মটরদানার সমান একটা সোনার নুড়ি।

সোনা! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।

দাঁত বের করে হাসল গোন্ড। একটা ভাঙা দাঁতের গোড়া দেখা গেল।

এখানে পেয়েছেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।

হ্যাঁ। ঘুরে দাঁড়িয়ে বরফে ঢাকা একটা খাঁড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করল গোল্ড। ওর সঙ্গে তাল রেখে হাঁটতে হিমশিম খেয়ে গেল কিশোর ও মুসা।

খাড়িতে পেয়েছি এই নুড়ি, অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে গোল্ড। মহা শয়তান ওই খাড়ি, ভীষণ চালাক। কিন্তু আমি ওটার চেয়েও চালাক। আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারবে না। হাজার হাজার বছর ধরে ওপরের ওই পাহাড় থেকে নালা বেয়ে খাড়িতে এসে পানি পড়ে। বয়ে নিয়ে আসে সোনা। খাড়ির পানি ইউকনে গিয়ে পড়ে। একবার বড় নদীতে সোনা চলে গেলে সেটা আর পাওয়া যায় না। তার আগেই খাড়ি থেকে বের করে নিতে হয়। সেটাই করছি আমি।

আপনি কি প্যান করে সোনা বের করেন? কিশোর জানতে চাইল।

সিনেমায় প্যান করতে দেখেছে ও। বড় বড় চালনির মত জিনিস নিয়ে সোনার খনির ধারে নালার অগভীর পানিতে দাঁড়িয়ে থাকে স্বর্ণসন্ধানীরা। চালনি দিয়ে পানি থেকে নুড়িপাথর, মাটি, কাদা, বালি সব ঘেঁকে তোলে। চালনি নেড়ে নেড়ে সোনার ডো আবর্জনা থেকে আলাদা করে ফেলে। পাথরের চেয়ে সোনা ভারী। তাই আলাদা করতে অসুবিধে হয় না।

প্যান করে বোকারা, গোল্ড বলল। আমি প্রেসার মাইন ব্যবহার করি।

কাঠের একটা লম্বা সরু সেচযন্ত্রের মত জিনিস দেখাল ও। ওটা দেখছ? গরমকালে নালার বুক থেকে চেঁছে তুলে আনা কাদাপানি আমি ঢেলে দিই ওটাতে। পানি, কাদা, সব গড়িয়ে পড়ে যায়। আর সোনা ভারী বলে তলানি হয়ে বাক্সে পড়ে থাকে। গুঁড়ো, নুড়ি, টুকরো, সব।

মুসা জিজ্ঞেস করল, সোনা কতটা পাওয়া যায় এখানে?

বলব না, ওদের দিকে চোরা চাহনি দিল গোল্ড। তবে একটা তথ্য জানাতে পারি। এখনকার দিনে সোনা পেতে চাইলে খনিতে খুঁজে লাভ হবে না, তাতে খাটনিই বাড়বে। আসল সোনা এখন টুরিস্টদের পকেটে।

হাসল কিশোর। আপনার কথায় কিন্তু মনে হচ্ছে থিম পার্ক কোম্পানির কাছে ঘুষ খেয়েছেন।

ধূর! একটা আধলাও দেয় না, জবাব দিল গোল্ড।

কিন্তু আমরা যে শুনলাম, আপনি নাকি ইলকিস বিগসের হয়ে কাজ করেন? মুসা বলল, আপনাকে নাকি অনেক টাকা দিতে দেখেছে।

মুঠোবদ্ধ হয়ে গেল গোল্ডের হাত। কে দেখেছে?

লুক স্টার্লিং, মুসা বলল।

ওর কথা! আস্ত মিথুক! ভঙ্গি দেখে মনে হলো সামনে লুককে পেলে এখনই ঘুসি মেরে বসত গোল্ড। ওর অবর্তমানে বাতাসে মারল। ও আমাকে দেখতে পারে না। যেদিন থেকে বুঝে গেছে, আর সবার মত আমাকে ঠকাতে পারবে না, সেদিন থেকেই আমার পিছে লেগেছে। আজ পর্যন্ত ইলকিস বিগ আমাকে কিছু দেয়নি, বকবকানি ছাড়া।

কথা বলতে যাচ্ছিল কিশোর। থামিয়ে দিল গোল্ড। যাও এখন। আর কোনদিন যেন আমার এলাকায় না দেখি। শুরু থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল তোমরা কারও স্পাই, এখন দেখছি ভুল করিনি।

গোল্ডের কাছ থেকে আর কিছু জানা যাবে না। শহরে ফিরে চলল কিশোররা।

কিশোর বলল, লুক আর গোল্ড, দুজনের মধ্যে একজন মিথ্যে বলছে। কোনজন? গোল্ড যদি ইলকিস বিগসের হয়ে প্রচারের কাজ করেই থাকে, সেটা অন্যায় নয়, লুকানোর দরকার কী?

জবাব দিতে যাচ্ছিল মুসা। দূর থেকে আসা শব্দ শুনে থেমে গেল। ঘাড়ের নোম দাঁড়িয়ে গেল। কিশোর! নেকড়ে!

হাসল কিশোর। হ্যাঁ, ডাকটা নেকড়ের ডাকের মতই। গোল্ড আমাদের ভয় দেখাচ্ছে।

কিন্তু মেনে নিতে পারল না মুসা। শহর এখান থেকে কতদূর?

কেন? ভুরু নাচাল কিশোর। তুমি ভাবছ নেকড়েরা শহরের সীমানায় ঢোকে না?

দেখো, কিশোর, ইয়ার্কি না! ফিরে তাকাল মুসা। নীরব কালো গভীর বন। বনের ভিতর কিছু ছায়ার নড়াচড়া। ওগুলোকে শুধু ছায়া ভেবেই সান্ত্বনা পেতে চাইল ও।

লুকও মিথ্যে বলে থাকতে পারেন, আগের প্রসঙ্গে ফিরে গেল কিশোর। গোন্ডের সঙ্গে তাঁর শত্রুতা। বুড়োর বিরুদ্ধে বলতেই পারেন।

শহরে সীমানার বাইরের শেষ ঢালটা পেরোচ্ছে ওরা, এমন সময় শহরের প্রান্তের একটা কেবিন থেকে বিগত্সকে বেরোতে দেখল। মুসা বলল, ভোটর প্রচার করতে বেরিয়েছে। যাই বলল, ভীষণ পরিশ্রমী লোক। চলো, গোেল্ডকে টাকা দিয়েছে কি না জিজ্ঞেস করি।

বিগসও ওদের দেখেছে। দাঁড়িয়ে গেল। ওরা কাছে গেলে জিজ্ঞেস করল, খনি দেখতে গিয়েছিলে নাকি?

কী করে জানলেন? কিশোরের প্রশ্ন।

অনুমান। ওদিক থেকেই এলে তো।

গোল্ড ফেরানির প্রেসার মাইন দেখতে গিয়েছিলাম, কিশোর জানাল।

ভালই করেছ, বিগ বলল। এখানকার একটা দর্শনীয় জায়গা। ঠিকঠাক করে নিয়ে টুরিস্ট আকৃষ্ট করার উপযুক্ত করা গেলে গোল্ড রাশ টাউন হিসেবে কদর বেড়ে যাবে গ্লিটারের।

মুসা বলল, আপনাদের থিম-প্ল্যান নিয়ে গোল্ড কিন্তু খুব আশাবাদী।

মাথা ঝাঁকাল বিগ্স। হবেই। ওর ওই খনি ওকে স্টার বানিয়ে দেবে। হলিউডের ছবিতে যে সব স্বর্ণসন্ধানীদের দেখো, সবাই অভিনেতা, ওর মত আসল স্বর্ণসন্ধানী ওরা কোথায় পাবে? গ্লিটারে থিম পার্কের সবচেয়ে বেশি বেতনভোগী কর্মচারী হয়ে গেলেও অবাক হব না।

আমি তো ভেবেছিলাম, এখনই বেতন পাওয়া শুরু করেছে গোল্ড, বিগৃসের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য বলল কিশোর।

তীক্ষ্ণ হয়ে গেল বিগসের দৃষ্টি। কার কাছে শুনলে? শুনেছি, যার কাছেই হোক, কিশোর বলল। কথাটা ঠিক কি বলুন।

গ্লিটারে থিম পার্কের একমাত্র বেতনভোগী কর্মচারী আমি, বিগস জবাব দিল। আরও কেউ যদি নিজেকে গ্লিটারের কর্মচারী বলে দাবি করে থাকে, কেন করছে আমি জানি না। যাই, অনেক কাজ। এখনও বহু লোককে বোঝননা বাকি।

চলে গেল বিগস।

ও ছাড়া গ্লিটারে থিম পার্কের আর কোন কর্মচারী নেই, হয়তো ঠিকই বলেছে, বিড়বিড় করল কিশোর, কিন্তু কোম্পানির কাছ থেকে কারও ঘুষ খেতে তো কোন অসুবিধে নেই। কোম্পানির হয়ে যদি কাউকে ঘুষ দিয়ে থাকে বিগস্…

নোংরা কাজ করানোর জন্য, কথাটা শেষ করল মুসা। তারমানে, এখন থেকে বিগসের ওপর নজর রাখতে হচ্ছে আমাদের।

এগিয়ে চলল ওরা। পায়ে চলা যে পথটা ধরে চলেছে, সেটা দিয়েই জোসির কুকুরের কেনলগুলোর কাছে যেতে হয়। মোড় পেরোলেই দেখা যাবে। কুকুরের উত্তেজিত চিৎকার শোনা গেল।

মোড়ের অন্যপাশে এসে জানা গেল উত্তেজনার কারণ। চিৎকার করে বলল কিশোর, মুসা, দেখো, একটা কুত্তা দড়ি ছিড়ে পালিয়েছে।

ঘরের কাছে খুঁটিতে বাঁধা থাকে কুকুরগুলো। একটা খুঁটির দড়ি ছেড়া। মুসা বলল, কামড়ে কেটে ফেলেছে।

দৌড়ে আসতে দেখা গেল জোসিকে। কাছে এসে হেঁড়া দড়িটা দেখে মুখ কালো হয়ে গেল। সর্বনাশ! রেড লাইট পালিয়েছে!

প্রতিটি কুকুরের কাছে গিয়ে কানের কাছে মোলায়েম স্বরে কথা বলে বলে ওগুলোকে শান্ত করতে লাগল ও। চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল কিশোররা। কুকুরগুলো শান্ত হলে জোসি বলল, সাংঘাতিক ক্ষতি হয়ে গেল। রেড লাইট ডায়মণ্ডহার্টের সহকারী। ডায়মণ্ড অসুস্থ হলে কিংবা অন্য কোন কারণে স্লেজ টানতে না পারলে রেড লাইট নেতৃত্ব দেয়। ইস, নেকড়েগুলোর ডাক শুনেই কেন যে চলে আসিনি!

নেকড়ের ডাক আমরাও শুনেছি, মুসা বলল।

দলের শক্তি বাড়ানোর জন্য পোষা কুকুরকে লোভ দেখিয়ে ডেকে নিয়ে যায় নেকড়েরা, জোসি বলল। জ্যাক লণ্ডনের কল অভ দি ওয়াইল্ড পড়নি? আবার কুকুরগুলোর কাছে গিয়ে মৃদু স্বরে ওগুলোর সঙ্গে কথা বলতে লাগল ও।

কী মনে হতে রেড লাইটের খুঁটির কাছে গিয়ে দাঁড়াল কিশোর দড়ির ছেড়া মাথাটা হাতে নিয়ে পরীক্ষা করতে লাগল। ফিরে তাকিয়ে ইশারা করল মুসাকে।

মুসাও দেখল দড়িটা। সুতোর ছেড়া মাথাগুলো এত মসৃণ কেন? দাঁত দিয়ে কাটলে কিংবা টানাটানি করে ছিড়লে তো এত সমান হয় না।

ঠিকই বলেছ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ধারাল ছুরি দিয়ে কাটার মত। মানে বুঝতে পারছ? দড়ির বেশির ভাগটাই কেটে রেখেছিল কেউ। কুকুরটা দুই-চার টান দিতেই বাকিটুকু ছিড়ে গেছে।

দূর থেকে আবার শোনা গেল নেকড়ের ডাক। সঙ্গে সঙ্গে চেঁচানো শুরু করল কুকুরগুলো। জোসি বলল, ইজি, বয়েজ, ইজি।

তুমি ওদেরকে শান্ত করো, জোসিকে বলল কিশোর। আমি আর মুসা গিয়ে রেড লাইটকে খুঁজে আনি।

বাধা দিতে গিয়েও কী ভেবে দিল না জোসি।

রেড লাইটের পায়ের ছাপ অনুসরণ করে বনের মধ্যে এসে ঢুকল কিশোর ও মুসা।

কুকুরটা অনেক বড়। থাবাও বড়। তুষারে গভীর হয়ে ডেবে গেছে। অনুসরণ করা সহজ।

নীচের দিকে চোখ নামিয়ে হাঁটছে দুজনে। কিশোর বলল, আমরা যখন মোড়ের অন্যপাশে, কুকুরগুলো তখন চেঁচাননা শুরু করেছিল। মনে আছে?

মাথা ঝাঁকাল মুসা। হ্যাঁ।

আমার ধারণা, ওই সময়ই দড়ি ছিড়ে বনের দিকে দৌড় দেয় রেড লাইট। আর তাই যদি হয়ে থাকে, বেশি দূরে যায়নি ও।

পায়ের ছাপ ধরে এগোতে থাকল ওরা। বন থেকে বেরিয়ে ছোট্ট এক টুকরো খোলা জায়গা পেরিয়ে আবার বনে ঢুকে গেছে কুকুরটা।

কাঁপা কাঁপা তীক্ষ্ণ চিৎকার থেমে থেমে ভেসে এল বনের ভিতর থেকে। পরস্পরের দিকে তাকাল কিশোর-মুসা। সাবধান হয়ে গেল।

কাছেই নেকড়েগুলো, কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলল মুসা। তারমানে কুকুরটাও আছে।

বনের ভিতর দিয়ে এগোতে এগোতে গাছপালার ফাঁক দিয়ে সামনে ছোট্ট আরেক টুকরো খোলা জায়গা চোখে পড়ল ওদের। ওরা বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল ডাকাডাকি।

বরফের মত জমে গেল যেন দুজনে। বাতাস স্তব্ধ। কোথাও কোন শব্দ নেই। ভূতুড়ে লাগল এই হঠাৎ নীরবতা। গায়ে কাঁটা দিল।

আস্তে করে গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল বাদামি-ধূসর একটা মাদী নেকড়ে। বড় জাতের কুকুরের সমান। দাঁড়িয়ে গেল ওদের দিকে তাকিয়ে।

একটু পর আরও তিনটে নেকড়ে বেরোল বন থেকে। পাশাপাশি প্রায় গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিশোর-মুসার দিকে। নেকড়েগুলোর হাঁ করা মুখের ভিতর থেকে লম্বা জিভ বেরিয়ে ঝুলে পড়েছে। কিশোরের মনে হলো, শিকারের অসহায়ত্ব দেখে নীরব হাসি ফুটেছে ওদের মুখে। খুব সামান্য লেজ নড়ানো বাদ দিলে একেবারেই মূর্তি।


কিশোর, কী করব? বিড়বিড় করল মুসা।


ওদের বলল, আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী নই, শান্তি চাই। ওদের নেতার কাছে নিয়ে যেতে বলো, বিড়বিড় করেই জবাব দিল কিশোর।


রসিকতা ছাড়ো। বাঁচার কোন বুদ্ধি আছে?


আছে। নড়বে না। ওদের মতই মূর্তি হয়ে যাও। আমরা ওদের হামলা করতে পারি, এ ধারণাটা যাতে কোনমতেই ওদের মাথায় না ঢোকে। আমরা যে ভয় পেয়েছি, সেটাও বুঝতে দেবে না।


বুঝলাম।


পিছিয়ে গিয়ে দেখতে পারি ওরা কী করে, কিশোর বলল। খুব ধীরে।


সাবধানে এক পা পিছনে সরল দুজনে। আরেক পা ফেলল। ওদের সঙ্গে যেন অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা রয়েছে নেকড়েগুলো, টান লেগে ঠিক ততখানিই এগোল, ওরা যতখানি পিছিয়েছে। তারপর দুই পাশের দুটো নেকড়ে ডানে-বাঁয়ে একটুখানি করে সরে গেল।


চলে যাবে? মুসার প্রশ্ন।


ভুলেও ভেবো না, সতর্ক করল কিশোর। আমাদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে। এভাবেই হামলা চালায় নেকড়েরা।


বাহ্, দারুণ একটা খবর শোনালে। কিন্তু তুমি তো নেকড়ে গবেষক নও। ওরা কী করবে জানলে কীভাবে?


বই পড়ে আর ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দেখে।


নেকড়েগুলো আকারে হাস্কি কুকুরের চেয়ে বড়। দূর অতীতে কোনও এক সময় বোধহয় একই গোত্রের প্রাণী ছিল ওরা, রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। কুকুরের তুলনায় নেকড়েগুলো অনেকটাই রোগাটে, ছিপছিপে। চোখে রাজ্যের খিদে। কিশোর জানে, কুকুরের চোয়ালের চেয়ে নেকড়ের চোয়াল দ্বিগুণ শক্তিশালী।


কিশোর, মুসা জিজ্ঞেস করল, ওরা যেভাবে আমাদের ঘিরে ফেলতে চাইছে, একেই কি সাঁড়াশি আক্রমণ বলে?


 

জানি না। তবে ওরা যা চাইছে, সেটা ঘটতে দেয়া যাবে না।


ঠেকাব কীভাবে?


ভাবছে কিশোর। ভোলা জায়গায় রয়েছে ওরা। বনের ভিতর কি নিরাপদ? না বিপদ আরও বেশি? বনে ঢোকা ছাড়া আর কোন উপায়ও দেখছে না। বন পেরিয়ে শহরের সীমানায় চলে যেতে হবে। কিন্তু তাতেও কি রক্ষা পাবে? সত্যিই কি শহরের সীমানায় ঢোকে না নেকড়েরা? সন্দেহ আছে কিশোরের।


মুসা, ডানে দেখো! ফিসফিস করে বলল মুসা।


ডান দিকের বন থেকে বেরিয়ে এসেছে একটা বড় হাস্কি। দুলকি চালে হেঁটে আসতে লাগল ওদের দিকে।


ওটাই বোধহয় রেড লাইট, কিশোর বলল।


মনে হয়, মুসা জবাব দিল। রেড লাইট হোক বা না হোক, ওটা আমাদের পক্ষে থাকলেই আমি খুশি।


নেকড়েগুলোর কাছাকাছি এসে থেমে গেল কুকুরটা। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গরগর শুরু করল। চাপা, ভয়ঙ্কর শব্দ। থেমে গেল নেকড়েগুলো। তুষারে ঢাকা বনের এই মরণ-নাটকের নতুন অভিনেতার দিকে নজর দিল।


 

এটাই সুযোগ, কিশোর বলল। পিছাতে থাকো। বনের মধ্যে ঢুকেই দেবে দৌড়।


কয়েক সেকেণ্ডেই বনে ঢুকে পড়ল দুজনে। একটা মুহূর্ত আর দেরি করল না। দৌড়ানো শুরু করল। বুটের চাপে ভাঙছে পাতলা তুষারের স্তর। জুতো ডেবে যাওয়াটা একটা অসুবিধে। আরেক অসুবিধে, দৌড়ালে হাঁপাতে হয়। দ্রুত শ্বাস টানার সময় নাক দিয়ে ঢুকে যায় কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। এ রকম আবহাওয়ায় এভাবে দ্রুত বাতাস টানার কারণে ফুসফুস জমে গিয়ে মানুষ মারা যাওয়ার গল্প শুনেছে কিশোর। তবে সেটা পরের ভাবনা। আপাতত নেকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচতে হবে।


 

পাতলা হয়ে এল বন। পায়ে চলা একটা পথের ওপর এসে পড়ল দুজনে। শহরের দিকে মুখ করে দৌড়াতে থাকল। দূরে একটা টিলার মাথায় উঠে আসতে দেখল জোসি আর ওর কুকুরের দলকে। থেমে গেল কিশোর। ওর প্রায় ঘাড়ের ওপর এসে পড়ল মুসা। তবে ধাক্কাটা লাগল না। ধপ করে পথের ওপরই বসে পড়ল দুজনে। হাঁপাতে লাগল বিপজ্জনকভাবে।


কাছে এসে স্লেজ থামাল জোসি। গাড়ি থেকে নেমে এল। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?


ভারী দম নিল কিশোর। ঢোক গিলে বলল, নেকড়ে।


আমাদের ঘিরে ফেলা শুরু করেছিল, মুসা জানাল। রেড লাইট আমাদের বাঁচিয়েছে।


অসীম সাহসে নেকড়েগুলোর মুখখামুখি হলো কুকুরটা, কিশোর বলল। ধমকানো শুরু করল। সুযোগ পেয়ে দৌড় দিলাম। ভুল করেছি। ওকে এভাবে ফেলে আসাটা উচিত হয়নি।


 

না, ভুল করনি। এটাই চেয়েছিল ও, জোসি বলল। তোমাদের পালানোর সুযোগ করে দিয়েছে। তোমরা যাও। আমি রেড লাইটকে আনতে যাচ্ছি। নেকড়েগুলো যেই বুঝবে কুকুরটা ওদের দলে যোগ দিতে চায় না, ধরে মেরে ফেলবে।


একা যাবে? কিশোর বলল। আমরা আসি?


দরকার নেই, জোসি বলল। নেকড়ে আমাদের কিছু করতে পারবে না। দেখছ না, কত কুকুর নিয়ে যাচ্ছি। গম্ভীর হয়ে গেল ও। আমি ভয় পাচ্ছি রেড লাইটের কথা ভেবে। ওকে জ্যান্ত পেলে হয়! ওকে হারালে…


স্লেজে ধাক্কা দিল জোসি। কুকুরগুলোকে বলল, হাইক! হাইক!


ছুটতে শুরু করল কুকুরের দল। মুহূর্তে টিলার ওপাশে অদৃশ্য হয়ে গেল।


 

সেদিকে তাকিয়ে থেকে চিন্তিত ভঙ্গিতে কিশোর বলল, কিন্তু কুকুরটার দড়ি কাটল কে? অবাক লাগছে আমার!


শহরের দিকে রওনা হলো দুজনে।


দড়ি কাটার খবরটা কি জোসি জানে? মুসার প্রশ্ন।


মনে হয় না। তবে জানার পর কী খেপা যে খেপবে সেটা আন্দাজ করতে পারছি। এই কুকুরগুলোই ওর সব।


শহরের কেবিন আর কাঠের ছাউনিগুলো নজরে এল। খপ করে মুসার হাত চেপে ধরে কিশোর বলল, দেখলে?


কী? এদিক ওদিক তাকাল মুসা।


আস্তে কথা বলো! ওই ছাউনিটার দিকে তাকাও।


একটা ছাউনির দরজা ফাঁক হয়ে আছে। সেটা দিয়ে চুপি চুপি বেরিয়ে এল একটা ছায়ামূর্তি।


কী করছে ও? মাংস চুরি?


জানি না, তাকিয়ে আছে কিশোর। তবে ওর ভাবভঙ্গি সুবিধের মনে হচ্ছে না। শয়তানি মতলব আছে। চলো তো দেখি।


ওদের দেখে ফেলল লোকটা। ছুটতে শুরু করল। ছাউনির পাশ ঘুরে অদৃশ্য হয়ে গেল।


 

ঢাল বেয়ে যত দ্রুত সম্ভব ছাউনির কাছে নেমে এল কিশোর ও মুসা। কোথাও দেখল না লোকটাকে।


বুঝলাম না, চারপাশে তাকাতে তাকাতে বলল বিস্মিত মুসা, কোথায় উধাও হলো?


ফিরে তাকাল কিশোর। দেখল লোকটাকে। পাহাড়ের ওপরের বনে ঢুকে যাচ্ছে। ওই যে যাচ্ছে! বলেই দৌড় দিল ও। মুসা ছুটল ওর পিছনে।


পাঁচ মিনিট পর হাল ছেড়ে দিল ওরা। ওদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে লোকটা। পিছু নিয়ে এখন ধরা অসম্ভব। তা-ও যদি নেকড়েগুলোর কাছ থেকে পালাতে গিয়ে শক্তি খরচ করে না ফেলত, এক কথা ছিল।


ধূর, গেল চলে! হাঁপাতে হাঁপাতে বলল মুসা। ছাউনিতে কী করছিল?


কিছু একটা কুমতলব তো নিশ্চয় ছিল, নইলে পালাল কেন? জবাব দিল কিশোর। ভালমত দেখেছ?


দেখেছি। সবুজ পার্কা। সামান্য এই সূত্র দিয়ে ওকে চিনতে পারব বলে তো মনে হচ্ছে না। কী করতে ঢুকেছিল, ছাউনিটাতে ঢুকে দেখা দরকার।


মাথা নাড়ল কিশোর। চুরি করে অন্যের ঘরে ঢোকাটা ঠিক হবে। তবে ছাউনিটা কার, সেটা জানা যেতে পারে। জেফরি আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করব।


 

কেবিনে ফিরে শুধু মুনকে পেল ওরা। মুন জানাল, বাবার শরীর ঠিক হয়ে গেছে। ঘরে বসে থাকতে ভাল লাগছিল না, মাকে নিয়ে তাই মিটিঙে গেছে। আমিও রওনা হচ্ছিলাম। যাবে নাকি?


কীসের মিটিং? জানতে চাইল মুসা।


ভোটের আগের শেষ মিটিং। শহরের সব লোক যাবে অ্যাসেম্বলি হলে, থিম পার্ক নিয়ে আলোচনার জন্য। জোসি কই? সে-ও তো যেতে চেয়েছিল।


রেড লাইট দড়ি ছিড়ে পালিয়েছে। ওকে খুঁজতে গেছে, কিশোর জানাল।


সর্বনাশ! কুকুরটাকে না পেলে মস্ত ক্ষতি হয়ে যাবে। রেড লাইট ওর দলের সবচেয়ে ভাল কুকুরগুলোর একটা। ইডিটারোড রেসেরও আর দেরি নেই। এ সময় রেড লাইটকে খোয়ালে খুব বেকায়দায় পড়ে যাবে।


পার্কা পরে বেরিয়ে এল মুন। অ্যাসেম্বলি হলে রওনা হলো তিনজনে। হাঁটতে হাঁটতে বন্ধুকে বলল মুসা, ওকে কি ওখানে পাওয়া যাবে?


কাকে? বুঝতে পারল না কিশোর।


যাকে আমরা তাড়া করেছিলাম।


কী জানি। যদি যায়ও ও, চিনতে পারব না। শহরের অনেকেই সবুজ পার্কা গায়ে দেয়। কোনজন আমাদের লোক বুঝব কীভাবে?


অ্যাসেম্বলি হলে এসে দেখল লোকে ভরে গেছে। পিছনের সারিতে সিট পেল ওরা। নেতা গোছের একজন সভা আরম্ভ করার নির্দেশ দিলেন। তাঁকে চেনে না কিশোররা।


মিস্টার সিউল, টেডের বাবা, ফিসফিস করে বলল মুন।


প্রথমে বিগসকে কিছু বলার অনুরোধ জানালেন মিস্টার সিউল।


গ্লিটারে থিম পার্ক হলে শহরবাসী কী কী সুবিধে ভোগ করবে, তার ওপর বক্তৃতা দিল বিগস্। ঘুম পাচ্ছে কিশোরের। হাততালির শব্দে চমকে জেগে গেল। দেখে বিগ বসে পড়েছে। গোল্ড ফেরানি উঠে দাঁড়িয়েছে। বক্তৃতা শুরু করল। পুরো সজাগ এখন কিশোর। কান খাড়া করে শুনতে লাগল।


গ্লিটারে আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম আমরা করে যেতে পারব, কোনটাই বন্ধ হবে না, গোল্ড বলছে। আমি খনিতে কাজ করতে পারব, শিকারীরা শিকার করতে পারবে, জেলেরা মাছ ধরতে পারবে। অমানুষিক পরিশ্রম করেও কোনমতে টিকে আছি এখন আমরা। অবস্থা যা দেখা যাচ্ছে, আর কিছুদিন পর না খেয়ে থাকতে হবে। খনিতে এখন আর সোনা মেলে না। সোনা এখন টুরিস্টের পকেটে, ডলার হয়ে ঢুকে গেছে। ওদের পকেট থেকে ওগুলো বের করে আনতে না পারলে আমাদের উন্নতি হবে না। কিন্তু বের করার জন্য গ্লিটারে ওদেরকে ডেকে আনা দরকার। থিম পার্ক কোম্পানি নিজেরাও টাকা কামাতে চাচ্ছে, আমাদেরও ভাগ দিতে চাচ্ছে, তাহলে সমস্যাটা কোথায়? এ সুযোগ আমাদের হাতছড়া করা উচিত হবে না।


অর্ধেকের মত শ্রোতা জোর করতালি দিয়ে স্বাগত জানাল গোল্ডের বক্তব্যকে। যারা দিল না, তাদেরও অনেককেই এই বক্তৃতা শোনার পর দ্বিধান্বিত মনে হচ্ছে। থিম পার্কের পক্ষে ভোট দেবে কি না সেটা ভাবছে বোধহয়।


জেফরি উঠে দাঁড়ালেন। গোল্ড ঠিকই বলেছে।


অবিশ্বাসের গুঞ্জন উঠল শ্রোতাদের মাঝে। পার্কের পক্ষ নিয়েছেন ঘোর বিরোধী জেফরি! অবাক হলো কিশোর।


ঠিক বলেছে গোল্ড, আবার বললেন জেফরি, অন্তত একটা ব্যাপারে। আমাদের আয় কমে গেছে। আর কমলে না খেয়ে থাকতে হবে। আমরা সেটা জানি। আয়ের নতুন পথ খোঁজা উচিত আমাদের, তা-ও জানি। কিন্তু আমার মতে থিম পার্কই এর সমাধান নয়।


পাশে বসা মুনকে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে শুনল কিশোর। স্বস্তির।


শত শত বছর ধরে, জেফরি বলে চলেছেন, এখানকার মাটি আর প্রকৃতির সঙ্গে মিলে-মিশে বাস করেছেন আমাদের পূর্বপুরুষরা, আমরাও করছি। শীতের আগে আমরা বনে গিয়ে মুজ শিকার করি, গরমে স্যামন ধরি নদীতে। দীর্ঘ শীতের মাসগুলোতে আমরা কুকুরের ট্রেনিং দেই। আমাদের হস্তশিল্পের কদর দুনিয়াজোড়া। আমাদের ইতিহাস, আমাদের ঐতিহ্য, সব আমরা নষ্ট করব টাকার লোভে টুরিস্ট ডেকে আনলে। আমাদের স্বকীয়তা বলতে আর কিছু থাকবে না তখন। আমাদের শহর আমাদের থাকবে না। হাজার হাজার মাইল দূরের অফিসে বসে এ শহরটাকে নিয়ন্ত্রণ করবে এমন কিছু মানুষ, গ্লিটারবাসীর কাছে যারা পুরোপুরি অচেনা। আমরা কি ওদের ডেকে এনে নিজের সর্বনাশ করতে চাই? ভালমত ভেবে দেখা দরকার।


বসে পড়লেন জেফরি। আবার অর্ধেকের মত শ্রোতা জোর করতালি দিয়ে তাঁকে সমর্থন করল।


বিগস উঠে দাঁড়িয়ে বলল, জেফরি, আপনার বক্তব্যকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি। আপনার উদ্বেগের কারণও আমি বুঝি। কিন্তু একটা কথা কি আপনি জানেন, থিম পার্ক কোম্পানি আপনাদের প্রতি আকৃষ্টই হয়েছে আপনারা আপনাদের ঐতিহ্য বজায় রাখতে পেরেছেন বলেই? আপনার কি মনে হয় সে-সব ধ্বংস করে দিতে চাইব আমরা? তাতে নিজের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারব। পুরানো সব কিছু ধ্বংস করে দিলে টুরিস্টদের কী দেখাতে আনব? আমি আপনাকে পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই…


কথা শেষ হলো না ওর। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠল অ্যাসেম্বলি হল।

তুমুল শোরগোল। অ্যাসেম্বলি হলের অনেকেই সিট থেকে মেঝেতে ঝাঁপ দিয়েছে। বহু প্রশ্ন আর চিৎকার-চেঁচামেচির স্রোত বয়ে গেল জনাকীর্ণ ঘরটায়। কে যেন একজন চেঁচিয়ে উঠল, এই চলো চলো, বেরোও! মরবে নাকি এখানে থেকে! দরকার নেই আমাদের থিম পার্কের!


হুড়াহুড়ি করে দরজার দিকে ছুটল বহু লোক। বাইরে থেকে চিৎকার শোনা গেল, আগুন! আগুন!


 

এই থামুন থামুন! শান্ত হোন! সব হট্টগোলকে ছাপিয়ে শোনা গেল মিস্টার সিউলের কণ্ঠ। অহেতুক ঠেলাঠেলি করবেন না। ঘরের মধ্যে কোন বিপদ নেই। বাইরে থেকে এসেছে বিস্ফোরণের শব্দ।


আতঙ্কিত জনতার কাছ থেকে মুনকে টেনে সরাল কিশোর ও মুসা। তারপর দুজনে হাতে হাত ধরে ওকে মাঝখানে রেখে একটা ব্যারিকেড তৈরি করল উন্মত্ত জনতার ধাক্কাধাক্কি থেকে বাঁচানোর জন্য। শহরের গণ্যমান্য কয়েকজন নানাভাবে বুঝিয়ে জনতাকে থামানোর চেষ্টা করছে। দরজার কাছ থেকে ওদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে চেয়ারে বসাতে চাইছে। দ্রুত কমে এল আতঙ্ক।


 

জেফরির চিঙ্কার শোনা গেল, দরজার কাছ থেকে সরে আসুন। বাতাস ঢোকা বন্ধ করে দিচ্ছেন তো।


ঘুরে তাকাল মুসা। একটা চেয়ারের ওপর দাঁড়ানো দেখতে পেল জেফরিকে। দুই হাত মুখের কাছে জড় করে চিৎকার করে আবার বললেন তিনি, যারা আগুন নেভাতে পারে তাদের বেরোতে দিন আগে। সরুন। সরে যান দরজার কাছ থেকে।


 

কেমন বোকা বোকা লাগছে মানুষগুলোকে। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। ধীরে ধীরে সরে যেতে শুরু করল দরজার কাছ থেকে। ডজনখানেক লোক, যাদেরকে জেফরির কেবিনের আগুন নিভাতে দেখেছিল মুসা, এক দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। তাদের পিছু পিছু আরও অনেকেই বেরোনো শুরু করল।


চলো, আমরাও যাই, কিশোরকে বলল মুসা।


জনতার লম্বা সারিতে একটা ফাঁক দেখে তার মধ্যে নিজেদের ঢুকিয়ে নিল ওরা। মনে হলো সারিটা আটকে গেছে। আগেও যায় না, পিছেও যায় না। তারপর আচমকা স্রোতের ধাক্কায় কুটোর মত বেরিয়ে চলে এল সরু দরজাটা দিয়ে। ঠাণ্ডা বাতাসে দম নিতে লাগল হাঁ করে।


এমনিতে বাইরের বাতাস তাজাই থাকে, তবে এখন পুরোপুরি তাজা বলা যাবে না। ধূসর ধােয়ার চাদর ছড়িয়ে পড়েছে। কোনখানে ওই ধোয়ার উৎপত্তি, বুঝতে সময় লাগল না।


 

হায় হায়, আমার দোকান! চিৎকার করে উঠলেন লুক স্টার্লিং। আমার দোকানে আগুন লেগেছে।


দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে দৌড়ানো শুরু করলেন তিনি। তাঁর ঠিক পিছনেই রইল কিশোর ও মুসা। অর্ধেক পথ এসে কিশোর বলল, দোকান না, দোকান না, আগুন লেগেছে পিছনের কোন কিছুতে।


মুসাও দেখল। আগুন আর ধোঁয়া উঠছে দোকানের পিছনে বেশ খানিকটা দূরের একটা কাঠের ছাউনি থেকে। অবাক হলো। এটাই সেই ছাউনি, যেটা থেকে একজন লোককে বেরোতে দেখে তাড়া করেছিল ওরা।


কাজে লেগে গেছে অগ্নিনির্বাপক বাহিনী। বালতি বালতি পানি ছুঁড়ে দিচ্ছে ভাঙা জানালা দিয়ে ভিতরে। কিশোররা ওদের কাছে পৌঁছতেই ধুড়স করে বিকট শব্দে ছাত ধসে পড়ল। ফাঁকা পেয়ে লাফ দিয়ে গাছের মাথার কাছে উঠে গেল আগুন।


 

ফ্যাকাসে মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল লুক স্টার্লিংকে। কাছে গিয়ে দাঁড়াল মুসা। বলল, ভাগ্যিস দোকানে লাগেনি।


ওই ঘরে কী আছে? পিছন থেকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।


জঞ্জাল আর আজেবাজে বাতিল জিনিস, লুক জবাব দিলেন। পুড়ে গেলেই ভাল।


আপনার দোকান থেকে দূরেই আছে ওগুলো, কিশোর বলল। ওখান থেকে আগুন ছড়াবে না।


কিন্তু লাগল কীভাবে? মুসার প্রশ্ন। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে তো মনে হলো বোমা ফেটেছে।


এমন অনেক জিনিস আছে ফাটলে বোমার মত শব্দ হয়, লুক বললেন। গোটা দুই পাঁচ গ্যালনের জেরিক্যান ছিল ভিতরে। যদি সামান্য পেট্রলও থেকে থাকে ওগুলোর কোনটাতে, আর গরম করা হয়, ভিতরে যে বাষ্প তৈরি হবে, তাতে বোমা ফাটার মতই শব্দ হবে।


তারমানে আপনি বলতে চাইছেন প্রথমে আগুন লেগেছে, জেরিক্যানগুলোকে গরম করেছে, তারপর বিস্ফোরণ? কিশোরের প্রশ্ন।


কী করে বলি? দেখার জন্য আমি তো আর এখানে ছিলাম না। সবার সঙ্গে মিটিঙে ছিলাম। তোমরা জিজ্ঞেস করলে, তাই কীভাবে আগুন লাগতে পারে ধারণা দিলাম মাত্র। অস্থির হয়ে উঠেছেন লুক। কিশোরদের কাছ থেকে সরে গেলেন।


 

আগুন নিভানোর পর নিজেদের কেবিনে ফিরে এল গোয়েন্দারা। আলোচনায় বসল।


এই প্রথম একটা দুর্ঘটনা ঘটল, মুসা বলল, যা জোসির রেসকে কোনভাবে প্রভাবিত করবে না। থিম পার্কের বিরোধিতা যারা করছে, তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্যও ঘটানো হয়ে থাকতে পারে এটা।


কিন্তু লুক তো থিম পার্কের বিপক্ষে নন, কিশোর বলল। তাহলে তাঁর ঘর পোড়ানো হলো কেন?


সেটাই তো বুঝতে পারছি না। ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে রহস্য!


কিশোর বলল, তবে, আগের রহস্যগুলোর সঙ্গে এই ছাউনি পোড়ানোর সম্পর্ক আছে। সন্দেহভাজনদের সংখ্যা এখন কমিয়ে আনা সম্ভব। মিটিঙের সময় আমাদের জানামতে কে কে টাউন হলের বাইরে


ছিল?


টেডকে দেখিনি ওখানে, মুসা বলল।


জোসিও ছিল না।


তারমানে তুমি জোসিকেও সন্দেহ করো?


এখনও করছি না, কিশোর বলল। টাউন হলের বাইরে কে কে ছিল সেটা মনে করার চেষ্টা করছি আপাতত। লুকের কথাই ঠিক মনে হচ্ছে। আগুনটা আগে লেগেছে, তারপর বিস্ফোরণ। আর যদি বোমা ফাটিয়ে আগুন লাগানো হয়, ফাটানো হয়েছে টাইমার দিয়ে। তখন আবার সন্দেহভাজনদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। যে কেউ ঘটাতে পারে এ রকম দুর্ঘটনা, মিটিঙে সে-লোক থাকুক বা না থাকুক।


দমে গেল মুসা। কিশোরের কথায় প্রথমে মনে হয়েছিল, রহস্য সমাধানের দোরগোড়ায় পৌছে গেছে। এখন মনে হচ্ছে, এ রহস্য ভেদ করা এত সহজ নয়।

.

******

.

দরজায় টোকা শুনে উঠে গিয়ে খুলে দিল ও। জোসি দাঁড়িয়ে আছে।


ঘরে ঢুকল জোসি। পার্কাটা খুলে নিতে নিতে বলল, রেড লাইটকে পাওয়া গেছে।


ভাল আছে ও? চেঁচিয়ে উঠল মুসা।


আছে। কিন্তু ভীষণ দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে আমাকে। ওকে কেনলে রাখতে গিয়ে ছেঁড়া দড়িটা দেখলাম। কেউ কেটে রেখেছিল।


মাথা ঝাঁকাল কিশোর। আমরাও দেখেছি। তোমাকে বলার সুযোগ পাইনি।


টেড যে এতদূর যাবে তা কল্পনাও করতে পারিনি, ছোট্ট ঘরটার মধ্যে পায়চারি শুরু করল জোসি। কী করতে চাইছে ও? যুদ্ধ? ও কি বুঝতে পারছে না ও যতটা ক্ষতি করছে আমার, আমিও ততটাই করতে পারি? এ ভাবে দুজনে ঝগড়া আর একে অন্যের ক্ষতি করতে থাকলে লাভ কিছু হবে না, বরং ক্ষতি, রেসে আর অংশ নিতে পারব না।


টেডকে দেখেছ নাকি? মুসা জিজ্ঞেস করল। ওর সঙ্গে কথা আছে আমাদের।


মাথা নাড়ল জোসি। দেখিনি। হয়তো কুকুরগুলোকে প্র্যাকটিস করাতে নিয়ে গেছে। এখন তো ওর একমাত্র কাজই হলো প্র্যাকটিস। আমিও অবশ্য তা-ই করতাম। কিন্তু দুর্ঘটনাগুলো বাধা দিচ্ছে আমাকে। ভয় লাগছে, প্র্যাকটিস করাতে না পারলে চর্বি জমে যাবে কুকুরগুলোর গায়ে। তাতে ক্ষিপ্রতা হারাবে ওরা। আমাকে আটকে ফেলে এটাই করাতে চাইছে কি না টেড, কে জানে!


 


পরদিন খুব সকালে লুকের ছাউনিটা দেখতে চলল কিশোর ও মুসা। বাতাসে ছাই আর পোড়া কাঠের ঝাঁঝাল গন্ধ৷ প্রচণ্ড তাপে গলে বিকৃত, কালো হয়ে গেছে বড় বড় ক্যান। বিছানার একটা গদি পুড়েছে, প্রিংগুলোই শুধু অবশিষ্ট আছে, কাপড়, রবার সব পুড়ে ছাই। পুরানো একটা সোমোবাইল, আগেই হয়তো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, এখন পোড়া দেহটা পড়ে আছে।


কী খুঁজছ? কিশোরকে ছাতের একটা কড়িকাঠ সরাতে দেখে জিজ্ঞেস করল মুসা।


অস্বাভাবিক কিছু, জবাব দিল কিশোর।


হাসল মুসা। এখানে স্বাভাবিক কোটা? সবই তো অস্বাভাবিক।


মিনিট বিশেক খোঁজার পর হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল কিশোর, মুসা, দেখো!


পুরানো মডেলের একটা অ্যালার্ম ঘড়ি দেখাল ও চাবি ঘুরিয়ে দম দেয়া হতো।


সোমোবাইলটার মতই আরেকটা জঞ্জাল, আগ্রহ দেখাল না মুসা।


তা ঠিক। কিন্তু আসল জিনিসটাই চোখে পড়েনি তোমার। বারো নম্বর লেখাটার ঠিক মাঝখানে একটা পিন ফুঁড়ে বেরিয়ে আছে। ঘণ্টার কাঁটা আর মিনিটের কাঁটা দুটোকেই এক জায়গায় আটকে দিয়েছে।


আরে তাই তো! এতক্ষণে উৎসাহ দেখা গেল মুসার। ব্যাটারিতে দুটো তার লাগিয়ে তারের এক মাথা মিনিটের কাটায়, আরেক মাথা ঘণ্টার কাঁটায় লাগিয়ে দিলে, বোমার টাইমার বানিয়ে ফেলা যায়।


এ ধরনের ঘড়ি কোথায় দেখেছি আমি, তা-ও মনে পড়ছে, কিশোর বলল। লুক স্টার্লিঙের দোকানের তাকে। পোড়া ঘড়িটা দেখিয়ে বলল, এটা কার কাছে বিক্রি করেছিলেন, মনে করতে পারবেন নিশ্চয়।


চলো, জিজ্ঞেস করি।


দোকানে ঢুকে ওরা দেখল দোকানের মেঝে ঝাড় দিচ্ছেন লুক।


পেলে কিছু? মুখ তুললেন না তিনি, নিজের কাজে মনোযোগ। দেখলাম, পোড়া ছাইয়ের গাদায় কী যেন খুঁজে বেড়াচ্ছ।


এই যে, এটা পেলাম, পোড়া, বাতিল ঘড়িটা দেখাল কিশোর।


ও, ওটা। দশ বছর আগে ফেলে দিয়েছিলাম।


হতাশ হলো মুসা। কিছুদিনের মধ্যে কেউ কিনেছে এ রকম ঘড়ি?


কিনলে তো বেঁচেই যেতাম, তাকের দিকে আঙুল তুললেন লুক। ওই দেখো, কত ঘড়ি পড়ে আছে। বড় শহর হলে কবে বেচে ফেলতাম। ওসব জায়গায় সময়ের খুব দাম। আর এখানে লোকের অফুরন্ত সময়। অ্যালার্ম ক্লক কারও কাজে লাগে না।


দোকান থেকে বেরোতেই বিগসূকে দেখতে পেল ওরা। হনহন করে হেঁটে চলে যাচ্ছে শহরের বাইরে। বার বার ফিরে তাকাচ্ছে। কেউ পিছু নিল কি না দেখছে বোধহয়।


কোথায় যায়? মুসার প্রশ্ন।


চলো, দেখে আসি।


বিগস্ এখনও ওদের দেখেনি। বেশ অনেকটা দূর থেকে ওকে অনুসরণ করে চলল দুজনে। মিনিট পাঁচেক পর মুসা বলল, এ রাস্তা দিয়ে একমাত্র গোল্ডের বাড়িতেই যাওয়া যায়।


ওখানে যাচ্ছে কেন? নিজেকেই যেন প্রশ্ন করল কিশোর। গোল্ডের কাছে তো আর থিম পার্কের উপকারিতা বয়ানের দরকার নেই। গোল্ড এমনিতেই ওর পক্ষে।


সেটাই তো ভাবছি।


গোল্ডের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল বিগস্। টোকা দেবার আগেই খুলে গেল দরজা।


তারমানে বিগস্ আসবে গোল্ড জানে, ফিসফিস করে বলল মুসা। আরেকটু কাছে যেতে পারলে ভাল হতো। কী বলে শুনতে পারতাম।


পা টিপে টিপে এগোল দুজনে। কেবিনের পাশ ঘুরে এসে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে কান পাতল। বিগসকে বলতে শুনল, আগুন লাগানো, বোমাবাজি, এ সব কিন্তু মোটেও পছন্দ হচ্ছে না আমার!


এ সব আমাকে বলছ কেন? রেগে গেল গোল্ড।


কোম্পানির বদনাম হয়ে যাচ্ছে, বিগস বলল। এই শয়তানি বন্ধ করা দরকার।


গোল্ডও চেঁচিয়ে উঠল, আমাকে ধমকানোের তুমি কে? আমার যা খুশি আমি করব। আগুন লাগাতে ইচ্ছে করলে লাগাব, বোমা মারতে ভাল লাগলে মারব। তোমার গা জ্বালা করলে ইউকন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ঠাণ্ডা করোগে।


মুসার দিকে তাকাল কিশোর। এক ভুরু উঁচু করল। গোল্ডের কথায় মনে হচ্ছে অপরাধগুলো সে-ই করেছে।


তুমি ভাবছ এ সব করে কোম্পানির মস্ত উপকার করছ? বিগসের ঝাঁঝাল কণ্ঠ। এমনিতেই পরিস্থিতি ভীষণ নাজুক। শহরের লোকের মানসিকতা এই ভাল তো এই মন্দ। কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারছে না। এখন এ সব দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেবে বুঝতে পারছ না? আমি এ সব বন্ধ করাব। বুঝলে, করিয়ে ছাড়ব?


আমার বাড়িতে এসে আমাকেই ধমক! গর্জে উঠল গোল্ড।


বিগও কম যায় না। আমি তোমাকে এ সব করতে বলিনি। পাগলামি করে কোটি ডলারের প্রোজেক্ট ধ্বংস করবে, আর আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকব যদি ভাবো, ভুল করছ।


হঠাৎ শক্ত হয়ে গেল কিশোর। ওদের পিছনের ঝোপে কী যেন নড়ছে। বড় কোন জানোয়ার হতে পারে। ফিরে তাকাল ও। ভয়ের শীতল শিহরণ বয়ে গেল মেরুদণ্ডে।


ঝোপ থেকে বেরিয়ে এল বিশাল এক বাদামি ভালুক। কিশোরদের দেখে যেন হোঁচট খেয়ে থেমে গেল। পিছনের দুই পায়ে ভর দিয়ে মানুষের মত সোজা হয়ে দাঁড়াল। হাঁ করা মুখের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছে টকটকে লাল জিভ আর হলুদ রঙের মারাত্মক দাঁত।


ওর দিকে তাকিয়ে রাগে গোঁ-গোঁ করল জানোয়ারটা।


দিশেহারা হয়ে পড়ল কিশোর। কী করবে, বুঝতে পারছে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ