Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ছোটদের সাহাবী নিশাত তাসনীম

 #ছোটদের_সাহাবী

 নিশাত তাসনীম


ছোট্ট বন্ধুরা! আজ আমি তোমাদেরকে একটি গল্প শোনাব। এটা কিন্তু কোনো রূপকথার গল্প নয়। কল্পনাকেও হার মানায় এমন এক জীবন গল্প।


এই গল্পেরও একজন হিরো আছেন। আবার তোমরা ভেবোনা যে, তিনি কোনো রাজকন্যাকে দৈত্যের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন; বরং তিনি এর থেকেও বড় কিছু করেছেন।


তিনি ছিলেন তার সময়ের শ্রেষ্ঠ একজন কুস্তিগীর । তিনি যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি ছিলেন মস্ত বড় একজন পালোয়ান।তৎকালীন খ্যাতনামা কবিদের সব কবিতাই তার মুখস্থ ছিল। তাঁর গায়ের রং ছিল উজ্জ্বল গৌরবর্ণ, টাক মাথা, গন্ডদেশ মাংসহীন, ঘন দাড়ি, মোঁচের দু’পাশ লম্বা ও পুরু এবং শরীর দীর্ঘাকৃতির। হাজার মানুষের মধ্যেও তাঁকেই সবার থেকে লম্বা দেখা যেত।


জানো বন্ধুরা। এই মহান ব্যক্তি কে ছিলেন? এই মহান ব্যক্তি ছিলেন হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু।


আজকে আমরা শুনবো তাঁর ইসলাম গ্রহণের কিছু অংশ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম এর জন্মের পর বছর পর তার জন্ম।রাসূলে কারীমের সা. নবুওয়াত প্রাপ্তির সময় গোটা কুরাইশ বংশে মাত্র সতের জন লেখা-পড়া জানতেন। তাদের মধ্যে ’উমার' একজন।

উমারের বোন ছিল ফাতিমা। তাঁর স্বামী ছিল সাঈদ। তিনি  ইসলাম গ্রহণ করায় ফাতিমা তাঁর  স্বামীর সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন।


এরপর উমারের বংশের আর এক বিশিষ্ট ব্যক্তি নাঈম ইবনে আবদুল্লাহও ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু তখনও পর্যন্ত ’উমার ইসলাম সম্পর্কে কোন খবরই রাখতেন না।তিনি সর্বপ্রথম যখন ইসলামের কথা শুনলেন, রাগে জ্বলতে লাগলেন। তাঁর বংশে যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের তিনি পরম শত্রু হয়ে দাঁড়ালেন। জানো বন্ধুরা ঠিক তখনই তিনি জানতে পারলেন, তাঁর এক দাসীও ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তখন সেই দাসীকে নির্মম ভাবে অত্যাচার করল উমার।  যাঁদের ওপর তাঁর ক্ষমতা চলতো, সবার উপরই নির্মম উৎপীড়ন চালালেন। এক পর্যায়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ইসলামের মূল প্রচারক মুহাম্মাদকেই সা. দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। যেই কথা সেই কাজ।


তরবারি কাঁধে ঝুলিয়ে ’উমার' চলেছেন। হঠাৎ রাস্তায় এক লোকের সাথে তার দেখা। সেই লোকটি উমারকে বলল,  জানো উমার! একটা সংবাদ আছে।  তোমার বোন এবং বোনপতি বিধর্মী  হয়ে গেছে। তারা তো ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। এটা শোনার সাথে সাথে মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল উমারের। রাগে  ফেটে পড়লেন তিনি।


উমার তাড়াতাড়ি  ছুটলেন তাঁর বোন-বোনপতির বাড়ীর দিকে। বাড়ীর দরজায় ’উমারের রা. করাঘাত পড়লো। ফাতিমা এবং সাঈদ দু’জনই তখন খাব্বাব (রাঃ) এর কাছে কুরআন শিখছিলেন। 


উমারের আভাস পেয়ে খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু একটি ঘরে লুকিয়ে পড়লেন। তারা তখন সূরা ত্বহার কিছু অংশ তিলাওয়াত  করছিলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, 'তোমরা যে এতক্ষণ গুনগুন করছিলে-- তা কিসের আওয়াজ ছিল'?


তাঁরা উত্তর দিলেন,' আসলে আমরা  কথা বলছিলাম'। 


’উমার বললেন,'

সম্ভবত তোমরা দু’জন মুসলমান  হয়েছে'?


 তখন সাঈদ বললেন,' তোমার ধর্ম ছাড়া অন্য কোথাও যদি সত্য থাকে তুমি কি করবে ’উমার'?


 উমার ভীষণ রেগে গেলেন। তৎক্ষনাৎ উমার সাঈদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। দু’পায়ের নিচে সাঈদকে ফেলে  তাঁকে পিষতে লাগলেন। তখন ফাতিমা অর্থাৎ উমারের বোন তাঁর স্বামীকে বাঁচাতে এলো।


কিন্তু  উমার ফাতিমাকেও ধরে এমন মার দিলেন যে, তাঁর মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেল। ফাতিমা রাগে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন,'আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ(সাঃ) আল্লাহর রাসূল'।


এর অনেকদিন আগে কি ঘটেছিল জানো? উমার মুসলমানদেরকে অনেক অত্যাচার করেছিল; কিন্তু এর পরেও কোন মুসলমান ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেনি। সবাই আল্লাহ এবং তার রাসুল কি মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসত।


মুসলমানরা সব অত্যাচার  মাথা পেতে নিয়েছলিন। প্রয়োজনে বাড়ী-ঘর ছেড়েছে, তবুও ইসলাম ত্যাগ করেনি। এতে ’উমারের মনে একটা ধাক্কা লেগেছিল। তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।


দ্বিধা দ্বন্দে উমারের মনটা ভরে গিয়েছিল।


হঠাৎ বোনের রক্তাক্ত মুখটা ভেসে উঠলো উমারের মানসপটে। রক্ত মাখা মুখে তাঁর বোন দাঁড়িয়ে আছে।  মনটা বিষাদে ভরে উঠলো তাঁর।  আর দেরী না করে উমার পবিত্র হয়ে  বোনের কাছে আসলো।


তাঁর কাছ থেকে সূরা ত্বহার অংশ টুকু নিয়ে তিলাওয়াত করতে লাগলো  উমার। তিলাওয়াত শেষ  উমার বলল,' তোমরা আমাকে মুহাম্মাদের (সাঃ) কাছে নিয়ে চলো। 


তখন কি হলো জানো বন্ধুরা।  খাব্বাব(রাঃ) রুম থেকে বেড়িয়ে আসলেন। তোমাদের কি মনে আছে খাব্বাব (রাঃ) এর কথা? ঐ যে ফাতিমা আর সাঈদ যার কাছে কুরআন শিখছিলেন সেই খাব্বাব (রাঃ)। যিনি উমারের আভাস পেয়ে লুকিয়ে পড়লেন। 


খাব্বাব (রাঃ) বেড়িয়ে এসে বললেন, ' সুসংবাদ উমার! জানো রাসূল (সাঃ)  তোমার জন্য দুয়া করেছিলেন'।

এরপর উমার(রাঃ) ইসলামে প্রবেশ করেন।


বলো বন্ধুরা এই উমার কে ছিলেন?...


তিনি আমাদের ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমার(রাঃ)।আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা এই পৃথিবীতেই তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।  যিনি অর্ধ পৃথিবী শাসন করেছেন। তিনি মানুষের সুখ, দুঃখের সাথী ছিলেন। তিনি ইসলাম পালনের ব্যাপারে খুবই কঠোর ছিলেন।  তিনি ছিলেন একজন মহান সত্যনিষ্ঠ নেতা। শুধুই কি তাই? তিনি হলেন আমাদেরও অনুপ্রেরণা। 


ছোট্ট বন্ধুরা,

তাঁর জীবনি থেকে আমাদেরও অনেক কিছু শেখার আছে। আজ এতটুকুই থাক-- আরেকদিন শোনাবো আরেকটি জীবন গল্প। ততক্ষণ তোমরা নিজেদের খেয়াল রেখ। 

 

আর হ্যাঁ,তোমাদের গল্পটি কেমন লেগেছে -- জানাতে ভুলনা কিন্তু! 


সহায়ক বইঃ আসহাবে রাসূলের জীবন কথা (১ম খন্ড)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ