পর্নোগ্রাফি এক বিষাক্ত ভাইরাস। মাদকের চেয়ে ভয়ংকর। প্রযুক্তির স্রোতে নানা বয়সী নারী-পুরুষের হাতে এটি পৌঁছে গেছে । অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।
ধ্বংস হচ্ছে জীবন-যৌবন। মানুষ ছিটকে পড়ছে দ্বিন-ধর্ম থেকে । এটাকে এখন গোপনীয়তা ও লজ্জার কারণে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। দ্রুত এই অন্ধকার রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসার পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ইদানিং পর্ণোগ্রাফিতে আসক্তের সংখ্যা খুব ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাচ্ছে। ছোটো ছোটো বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝেও আসক্তির মাত্রা প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। সম্পর্কগুলো দিন দিন বেশ জটিলতার দিকে এগোচ্ছে। কখনো কখনো তা সম্পর্কচ্ছেদের করুণ পরিণতিতে গিয়ে শেষ হয়।
যৌনতা প্রাণীজগতে খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু সমস্যাটা তখনই হয়, যখন তা পর্নোগ্রাফির মতো একটি বিষয়ে আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়। আজ চলুন এ পর্নোগ্রাফির ভয়াবহ ছোবল থেকে কীভাবে নিজেকে এবং সেই সাথে আমাদের সমাজটাকে রক্ষা করা যায়, সেই সম্পর্কে জানা যাক।
প্রথমেই আসা যাক, পর্ণ দেখার কোন লেভেলকে আমরা আসক্তি বলছি কিংবা আপনার জীবনসঙ্গী কি আসক্ত কিনা তা বুঝবেন কীভাবে।
অধিকাংশ আসক্তের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তারা বেশ ছোটবেলা থেকে পর্ণ দেখে অভ্যস্ত এবং কৈশোরে পদার্পণের পর ধীরে ধীরে পর্ণ দেখার মাত্রা বাড়তে থাকে। কখনো কখনো যৌবনে পদার্পণের পূর্বেই বেশ ভালো ভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে। দৈনিক ৩-৪ ঘন্টা পর্ণ দেখা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়, প্রতিদিনের রুটিনও বলতে পারেন।
পর্ণ আসক্তি মাদকাসক্তির মতোই। যতই দেখবেন ততই দেখতে ইচ্ছা হবে। সাময়িক সুখের বিনিময়ে আপনাকে বিষণ্ণ এবং নিঃসঙ্গ মানুষে পরিণত করবে। যা আপনাকে আপনার স্ত্রী, সন্তান এবং পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।
বৈবাহিক জীবনে স্ত্রীর সাথে মিলনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
আসক্তির মাত্রা কখনো কখনো এমন স্তরে পৌছায় যে তা ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন এবং অনভিপ্রেত ঘটনার জন্ম দেয়, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো তরুণদের মাঝে যৌনতা নিয়ে মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দেয়।
কখনো কখনো আসক্তের কামশক্তি বা যৌন চেতনা ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে এবং শারীরিক মিলন খুব বিরক্তকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
নারীদের তুলনায় পুরুষদের মাঝে পর্ণ আসক্তির মাত্রা বেশি। চলুন এবার দেখে নেই পর্ণ আসক্তি আপনাকে কীভাবে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
শারীরিকভাবে পর্ণ আপনাকে ধীরে ধীরে যৌন অক্ষম করে তোলে। পর্ণ কিংবা শারীরিক মিলনে আপনার মস্তিষ্কের কিছু হরমোন এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যা আপনার দেহে যৌন উদ্দিপনার সঞ্চার করে।
শারীরিক মিলনে এবং পর্ণ দেখার সময় মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসৃত হয় যা আমাদের আনন্দ, হাসি কান্নাসহ যৌন অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে। শারীরিক মিলনে এবং পর্ণ দেখার সময় এই ডোপামিন আমাদের মনোযোগকে একীভূত করে এবং যৌনক্ষুধা জাগিয়ে তোলে।
অক্সিটোসিন এবং ভেসোপ্রসিন নামক দুইটি হরমোন ও এসময় নিঃসৃত হয় যা এই সুখের অনুভুতিকে মেমোরিতে জমা রাখে।
এছাড়াও শারীরিক উত্তেজনাকে চরমে নিতে এন্ডোরফিন নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। মিলনের শেষ মুহূর্তে সেরাটোনিন নিঃসৃত হয়।
বুঝতেই পারছেন, আপনার মস্তিষ্ক আপনার সর্বোচ্চ সুখের অনুভুতিকে স্টোর করে এবং আপনাকে সেই সুখের অনুভুতির দিকে ধাবিত করে ফলশ্রুতিতে আপনার আবার পর্ণ দেখতে ইচ্ছা হয় কিংবা শারীরিক মিলনে ইচ্ছুক হন। পর্ণোগ্রাফি আপনার মস্তিষ্ককে অস্বাভাবিকভাবে উত্তেজিত করে তোলে। এতে প্রচুর ডোপামিন ক্ষরণ হয়। ফলে আপনার মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ডোপামিন নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। তখন আপনার আর সাধারণ পর্ণ ভিডিও দেখতে ইচ্ছে করে না, নতুন নতুন খুব তীব্র উত্তেজক ভিডিওর চাহিদা বাড়ে। এভাবে বার বার একই প্রক্রিয়া দীর্ঘ দিন চলতে থাকলে আপনার মস্তিষ্কে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, শারীরিক মিলনের ক্ষমতা ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। যার ফলাফল আপনি নিজেই দেখতে পান। যেমন – স্ত্রীর সাথে অনুত্তেজক সম্পর্ক, বিষণ্ণতা, সহজেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলা, অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করেও উত্তেজনা ফিরে না পাওয়া ইত্যাদি।
পর্ণ কামশক্তি ধ্বংস করে
পূর্বেই উল্লেখ করেছি, যৌনতা খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। বিপরিত লিঙ্গের দুটি মানুষ কাছাকাছি কিংবা শারীরিক সংসর্গে এলে ভালবাসার অনুভূতি জন্মায় এবং যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু আসক্তদের ক্ষেত্রে দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে তারা স্ত্রীর সংস্পর্শে স্বাভাবিক উত্তেজনা কিংবা কামনা অনুভব করে না। এ সমস্যা বিবাহিত আসক্তদের মাঝে প্রবল।
পর্ণ আসক্তি ভালবাসার অন্তরায়
পর্ণ ভিডিওতে যেসব মডেল কিংবা অভিনেতা – অভিনেত্রী অভিনয় করেন তারা সাধারণত পেশাদার শিল্পী হয়ে থাকেন। সেই মডেলদের শারীরিক সৌন্দর্যের মোহে অভিভূত হয়ে আপনি আপনার সঙ্গিনী কিংবা স্ত্রীর শারীরিক সৌন্দর্যের সাথে তুলনা করেন। এতে খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনি হতাশ হবেন। এই হতাশা আপনার সঙ্গী/সঙ্গিনীর মনে বিরুপ প্রভাব ফেলে যা সম্পর্ক ভাঙ্গনের দিকে গড়ায়। শুধু তাই নয় আসক্তদের মাঝে সম্পর্কে অবিশ্বাস এবং অনাস্থাও দেখা যায়। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক কিংবা বহুগামিতাও দেখা যায়।
পৃথিবীতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ শারীরিক মিলনে লিপ্ত হচ্ছে কিন্তু ঠিক কতজন মানুষ সেই মিলনকে ভালবাসার মিলনে পরিণত করতে পেরেছেন তা নিয়ে বেশ সন্দেহ রয়েছে। শুধুমাত্র শারীরিক তাড়নার থেকে যে মিলন হয় তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী হলো ভালবাসার মিলন। এতে আপনার বৈবাহিক সম্পর্ক যেমন পোক্ত হবে তেমনি বিষণ্ণতা থেকে পাবেন মুক্তি।
পর্ণ আসক্তরা সারাজীবন এক ধরণের ঘোরের মাঝে কাটায়। তাদের কাছে সেই মডেল অভিনেত্রীরাই সৌন্দর্যের প্রতীক, তাদের মস্তিষ্ক ভার্চুয়াল উত্তেজনায় অভ্যস্ত হয়ে যায় ফলে স্ত্রীর সাথে মিলন তাদের বিরক্তকর হয়ে দাঁড়ায়। তরুণ আসক্তদের ক্ষেত্রে মানসিক বিকৃতি দেখা যায়। তাদের চিন্তা ভাবনা এমন স্তরে নেমে যায় যে, তারা মনে করে নারী মাত্রই ভোগ্যবস্তু। স্কুল, কলেজ রাস্তাঘাট এবং আশেপাশের সকল নারীদের নিয়ে বিকৃত ধারণা পোষণ করে। যৌনতা নিয়ে সঠিক ধারণা না থাকায় উঠতি বয়সী মেয়েরা লজ্জা, ভয় এবং ঘৃণায় কখনোবা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। শুধু তাই নয়, পর্ণের সহজলভ্যতা ছোট ছোট শিশুদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় ব্যাপক ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
পর্নোগ্রাফি এক বিষাক্ত ভাইরাস। মাদকের চেয়ে ভয়ংকর। প্রযুক্তির স্রোতে নানা বয়সী নারী-পুরুষের হাতে এটি পৌঁছে গেছে । অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।
ধ্বংস হচ্ছে জীবন-যৌবন। মানুষ ছিটকে পড়ছে দ্বিন-ধর্ম থেকে । এটাকে এখন গোপনীয়তা ও লজ্জার কারণে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। দ্রুত এই অন্ধকার রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসার পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এখানে মুক্তির কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হলো।
নিয়ত ও ঈমানি শক্তি প্রয়োগ
পর্নো আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য প্রথমে সুদৃঢ়ভাবে নিয়ত করতে হয়। রাসুলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন, সব কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে, যা সে নিয়ত করবে।
(বুখারি, হাদিস : ১)
নিয়তের শক্তি ও ঈমানি শক্তির সমন্বয়ে প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে হয়। এই দুই শক্তির মাধ্যমে নফস ও শয়তানের অপকৌশলের বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়া যায়। মহান আল্লাহর মদদ চলে আসে। কোরআনে এসেছে, যারা আমার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা চালায়, আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে উপনীত করব। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সঙ্গে আছেন।
’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬)
দৈনিক নামাজ আদায় করা
পর্নো আসক্তির গুনাহ থেকে বাঁচার বড় উপায় হলো নিয়মিত নামাজ আদায় করা। নামাজ সব গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে দেয়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে নবী! ওহির মাধ্যমে তোমার প্রতি যে কিতাব নাজিল করা হয়েছে, তা তিলাওয়াত করো এবং নামাজ কায়েম করো। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর জিকিরই তো সর্বাপেক্ষা বড় জিনিস। তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা জানেন।
(সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
একবার সাহাবারা নবীজি (সা.)-কে বললেন, অমুক সাহাবি বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, সে কি এখনো নামাজ পড়ে? সবাই বললেন, হ্যাঁ পড়ে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে যদি নামাজ পড়তে থাকে তাহলে নামাজ তাকে অবশ্যই একদিন খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। (মুসনাদে আহমদ : ২/৪৪৭)
নিয়মিত দোয়া করা
ভয়ংকর এই গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা প্রয়োজন। কেননা দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। পবিত্র কোরআনে দোয়া কবুলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার অনেক শরম ও আত্মমর্যাদা আছে। সুতরাং যখন মানুষ চাওয়ার জন্য তার নিকট দুই হাত উত্তোলন করে, তখন তিনি সেই হাত দুটিকে ব্যর্থ ও খালি ফেরত দিতে লজ্জা বোধ করেন।
(তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৫৬, আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৮৮)
পাপের কথা গোপন রাখা
কেউ যদি অজ্ঞতাবশত অনলাইনে অশ্লীল কিছু করে বা শয়তানের প্ররোচনায় অশ্লীল ভিডিও দেখে, এতে অবশ্যই গোনাহগার হবে। তবে পাপী ব্যক্তি যদি খালেস দিলে তাওবা করে এবং কারো কাছে গুনাহ প্রকাশ না করে, তাহলে মহান রব তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কোরআনে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দকর্ম করবে, অতঃপর তাওবা করবে এবং সংশোধন করে নেবে, তাহলে তো তিনি ক্ষমাপরায়ণ, দয়াশীল।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৪)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমার সব উম্মতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ছাড়া আর নিশ্চয়ই এটা বড় অন্যায় যে কোনো ব্যক্তি রাতের বেলা অপরাধ করল, যা আল্লাহ গোপন রাখলেন; কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন। আর সে ভোরে ওঠে তার ওপর আল্লাহর দেওয়া আবরণ খুলে ফেলল। (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৯)
পর্ণ আসক্তির কুফল জানা হলো, চলুন সমাধানটাও শুনে নেই।
পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে নিজেকে নিজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। প্রথমেই আপনার সংগ্রহে থাকা পর্ণ ভিডিওগুলো ডিলিট করুন। কারণ এ ব্যাপারে আসক্তদের সংগ্রহশালা বেশ উন্নত এবং পরিবর্ধনশীল!
নিয়মিত যেসব সাইটে ভিজিট করে আপনি আসক্ত হয়েছেন সেসব সাইট ব্লক করুন।
আপনার পরিবারের সদস্যদের পর্ণ জগতের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রাখতে হলে Parental Controls ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে Settings > Control Panel > Family Safety > Manage settings on the family safety websites। তারপর প্রয়োজন মতো বাকি কাজ নিজের মতো করে করবেন। কিংবা আপনি চাইলে বাচ্চার কম্পিউটার টেবিল বাসার এমন জায়গায় সেট করতে পারেন যেখান থেকে তার মনিটর দেখা যায়। এতে আপনার সন্তান কিছুটা হলেও এর থেকে রেহাই পাবে।
অনেক আসক্তদের কিছুক্ষণ পর পর পর্ণ দেখতে হয় কিংবা কাজের মাঝামাঝি সময়ে পর্ণ দেখতে হয়। আপনি যদি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত হন তবে পর্ণ ছাড়া আপনার পছন্দের কোনো সখ বা বিনোদনের উৎস খুঁজে বের করুন। কাজের মাঝে মাঝে পর্ণ না দেখে সেই পছন্দের কাজ করুন কিংবা গান শুনতে পারেন অথবা ৫ মিনিট হেঁটে আসতে পারেন বাহিরের মুক্ত বাতাসে। এতে আপনার মস্তিষ্ক এবং দেহ থাকবে সতেজ এবং ফুরফুরে।
নিয়মিত পর্ণ দেখে যাদের অভ্যাস কিংবা ১০ – ১৫ বছরের পুরনো অভ্যাস পর্ণ দেখা, তাদের জন্য আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। এখন থেকে একটি রুটিন তৈরি করুন, চাইলে গুগল ক্যালেন্ডারের সাহায্য নিতে পারেন। আজকের তারিখ থেকে ১ দিন পর পর ১৫ – ২০ মিনিট পর্ণ দেখুন। এভাবে ৭ দিন চলবে। তারপর ধীরে ধীরে ২ দিন পর পর দেখবেন এবং সেটাও ৭ দিন নিয়মিত। অতঃপর ৪, ৪, ৬, ৬ … দিন পর পর দেখুন। ৬ – ৮ মাস পর নিজের দিকে ফিরে তাকাবেন দেখবেন কত্ত বদলে গেছেন আপনি। চাইলে এই অভ্যাস স্ত্রীর কড়া শাসনেও করতে পারেন কারণ আপনি একজন আসক্ত।
পর্ণের কালোজাদুর মোহ থেকে বেরিয়ে এসে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে একজন সুন্দর মনের মানুষ উপহার দিন। পাঠকের মনে হতে পারে এই পোস্ট শুধুমাত্র বয়স্কদের জন্য লেখা উচিত কিংবা রোয়ারের মতো প্ল্যাটফর্মে যেখানে কম বয়স্ক পাঠকরাও রয়েছেন সেখানে এমন পোস্ট দেয়া উচিত নয়। তাদের জন্য বলছি, পর্ণের কালোজাদুর মোহে আপনার শিশু সন্তানও অন্ধকারের পথে পা বাড়াতে পারে। যে পর্ণ দেখে, তার এই লেখা বোঝারও বয়স হয়েছে। আমাদের দেশে যদিও যৌনতা এখনও ট্যাবু। কিন্তু এই ট্যাবু ভেঙ্গে বাবা- মা, শিক্ষক এবং বয়স্কদের উচিত শিশু কিশোরদের সঠিক তথ্য জানানো।
পর্নোগ্রাফি আসক্তি থেকে মুক্তির দোয়া
পর্নোগ্রাফি আসক্তি একটি মহারোগ। অশ্লীলতা বেহাপনা ছড়িয়ে পড়ে এ রোগ থেকেই। সমাজ নষ্টের বড় হাতিয়ার এটি। সামাজিক মূল্যবোধ উঠে যাচ্ছে এর কারণেই। পরিবারে ধর্মীয় নীতি চর্চার অভাবেও এমন হয়। তরুণরা পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি হয়ে পড়ছে নৈতিক শিক্ষার অভাবে।
পর্নো আসক্তির গুনাহ থেকে বাঁচার বড় উপায় হলো নিয়মিত নামাজ আদায় করা। নামাজ সব গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে দেয়।
পর্নো আসক্তির গুনাহ থেকে বাঁচার বড় উপায় হলো নিয়মিত নামাজ আদায় করা। নামাজ সব গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে দেয়।
পর্নোগ্রাফি এক বিষাক্ত ভাইরাস। মাদকের চেয়ে ভয়ংকর। প্রযুক্তির স্রোতে নানা বয়সি নারী-পুরুষের হাতে এটি পৌঁছে গেছে। অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। ধ্বংস হচ্ছে জীবন-যৌবন। মানুষ ছিটকে পড়ছে দীন-ধর্ম থেকে । এটাকে এখন গোপনীয়তা ও লজ্জার কারণে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। দ্রুত এই অন্ধকার রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসার পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আল্লাহর কাছে দোয়া করা জরুরি।
পর্নো আসক্তির গুনাহ থেকে বাঁচার বড় উপায় হলো নিয়মিত নামাজ আদায় করা। নামাজ সব গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে দেয়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে নবী! ওহির মাধ্যমে তোমার প্রতি যে কিতাব নাজিল করা হয়েছে, তা তিলাওয়াত করো, নামাজ কায়েম করো। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর জিকিরই তো সর্বাপেক্ষা বড় জিনিস। তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা জানেন। (সুরা আনকাবুত ৪৫)
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি সাময়ি, ওয়া মিন বাচারি ওয়া মিন শাররি লিসানি ওয়া মিন শাররি ক্বালবি ওয়া মিন শাররি মানিয়্যি।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কানে মন্দ কথা শোনা থেকে আশ্রয় চাই। চোখ দিয়ে মন্দ কিছু দেখা থেকে আশ্রয় চাই। জিহ্বা দিয়ে মন্দ কিছু বলা থেকে আশ্রয় চাই। অন্তরের খারাপ চিন্তা থেকে আশ্রয় চাই। দেহের কামনা-বাসনার খারাপ চিন্তা থেকেও আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ) এ দোয়াটি পর্নোগ্রাফি আসক্তির মহারোগ থেকে বাঁচাতে পারে।
এছাড়া নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা থেকে সতর্ক করেছেন। কারণ এসবের কারণে মানুষের ওপর নেমে আসে নাম না জানা নতুন রোগ-ব্যাধি ও ভাইরাসের আক্রমণ। হাদিসে পাকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনও জাতির মধ্যে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে তখন তাদের মধ্যে এমন এমন নতুন রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে; যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি।’ (ইবনে মাজাহ)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেছেন। হাদিসে এ সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া তুলে ধরেছেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে)
চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)
0 মন্তব্যসমূহ